অশ্বখুরাকৃতি কাঁকড়া একটি জীবন্ত জীবাশ্ম। এটি কাঁকড়ার সাথে যতটা না সম্পর্কিত তার থেকে বেশি সম্পর্কযুক্ত মাকড়শা ও বিছার সাথে। সাধারণভাবে কাঁকড়া নামে অভিহিত করা হলেও এরা সত্যিকার অর্থে কাঁকড়া নয়। আটলান্টিক অশ্বখুরাকৃতি কাঁকড়া(limulus polyphemus) প্রতি গ্রীষ্মমৌসুমে আমেরিকার মেক্সিকো উপসাগর থেকে এসে মূল উপসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় ঝাঁক বেঁধে অবস্থান করে।
তাদেরকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলার কারণ ডাইনোসরদের থেকেও ২০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এদের অস্তিত্ব ছিল। মসৃণ ও অত্যন্ত শক্ত ঘোড়ার খুরের ন্যায় বহিকঙ্কাল বা খোলকের জন্যই মূলত এদের এই নামকরণ। এরা এদের লম্বা লেজটি পানিতে পথনির্দেশক সূত্র(রাডার) হিসেবে ব্যবহার করে। যখন এরা সৈকতে বিপর্যস্ত অবস্থার সম্মুখীন হয় তখন তারা তাদের উল্টিয়ে দেয়।লেজটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় এমন ধারণা ভুল।
আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে অশ্বখুরাকৃতির কাঁকড়ার গুরুত্ব খুব কম সংখ্যক লোকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাদের নীল, তামা সমৃদ্ধ রক্ত ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণুর আক্রমণে দ্রুত জমাট বাঁধে। চিকিৎসাবিদ্যাবিষয়ক গবেষকেরা শিরায় প্রদান করার ঔষধে, বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকায় ও চিকিৎসা কার্যে ব্যবহৃত যন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নিশ্চিত করার জন্যে এদের রক্ত ব্যবহার করেন।
প্রতিবছর প্রায় হাজারেও বেশি অশ্বখুরাকৃতির কাঁকড়া তাদের আবাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের দেহের প্রায় এক তৃতীয়াংশ রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং এরপর পুনরায় তাদের সৈকতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ধরনের কাঁকড়া বাস্তুসংস্থানের জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।মোটা মাথাওয়ালা সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং বিশটিরও বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি তাদের বার্ষিক খাদ্যের জন্য এদের উপর নির্ভর করে। ১৯৯০ সালের পর থেকে আটলান্টিক অশ্বখুরাকৃতির কাঁকড়ার সংখ্যা কমেছে। পৃথিবীতে অশ্বখুরাকৃতি কাঁকড়ার দীর্ঘতম জনগোষ্ঠী ডিলেওয়ার(আমেরিকার একটি অঙ্গরাষ্ট্র) এ পাওয়া যায়।এখানে নোয়ার(noaa) বিজ্ঞানীরা নোয়ার "জাতীয় মোহনা গবেষণা ও সংরক্ষণ পদ্ধতি" প্রকল্পের আওতায় এদের নিয়ে গবেষণা করছেন। এই কাঁকড়াগুলো কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হল তাদের বাসস্থান ধ্বংস করা এবং ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশে উচ্চমাত্রায় টোপ হিসেবে ব্যবহার করা।
অনুলেখন
দিবস দেব
ওশানোগ্রাফি,চবি
তথ্যসূত্র:
http://oceanservice.noaa.gov/facts/