পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক শামুক প্রজাতিগুলোর মধ্যে "দৈত্যাকার ট্রাইটন শামুক" ( Giant Triton Snail) অন্যতম, যেটি প্রায় দেড় ফুট (০.৫ মিটার) লম্বা হয়ে থাকে। গ্রীক সমুদ্র দেবতা "পসিডন" এর পুত্র "ট্রাইটন" এর নামানুসারে এদের নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এদের Trumpet Triton নামেও ডাকা হয়, কেননা এদের খোলস শিঙ্গা-র (trumpet) মতো শব্দ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, লোহিত সাগরসহ বিভিন্ন ক্রান্তীয় অঞ্চলে এদের দেখা যায়। এরা সাধারণত প্রবাল প্রাচীর বা এর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে।
এদের ঘ্রাণশক্তি প্রখর এবং অত্যন্ত সক্রিয় শিকারী, যা তাদের শিকারদের মধ্যে সর্বদা ত্রাস সৃষ্টি করে থাকে। এরা মাংসাশী প্রাণি এবং বিভিন্ন তারামাছ বিশেষত, Crown of thorns starfish এদের প্রধান খাদ্য। এরা শিকার করার সময় শিকারের শরীরে বিষাক্ত লালা ঢুকিয়ে দেয় যা তাদের অবস করে ফেলে।
অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর এই শামুকটির বাস্তুতান্ত্রিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব নেহায়েত কম নয়। কেননা, "গ্রেট বেরিয়ার রিফ " রক্ষায় এদের ভূমিকা অপরিসীম।
"গ্রেট বেরিয়ার রিফ " এর জন্য একটি বড় হুমকি হচ্ছে Crown of Thorns Starfish, যারা প্রতিনিয়তই কোরাল-পলিপস ও কোরালের বহিরাবরণ ভক্ষন করে চলেছে, যা কোরালের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। Australian Institute of Marine Science ( AIMS) -এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যে বিগত ২৭ বছরে "গ্রেট বেরিয়ার রিফ"-এর প্রায় ৪২ শতাংশ কোরাল এদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদের উচ্চ প্রজননক্ষমতার জন্য এদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রেট বেরিয়ার রিফের ক্ষতির পরিমাণও বেড়েই চলেছে।
সেক্ষেত্রে, Giant triton নিজেদের কোনোধরনের ক্ষতি ছাড়াই অসংখ্য বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত Crown of thorns starfish (COTS)-দের ভক্ষন করে গ্রেট বেরিয়ার রিফের অত্যন্ত উপকার করছে। COTS এদের প্রতি এতটাই ভীত যে, triton এর ঘ্রাণ পেলেই এরা অন্যত্র পালিয়ে যায়। তাই গবেষকরা "গ্রেট বেরিয়ার রিফ" রক্ষায় Triton snail এর শরীরের ঘ্রাণকে প্রাকৃতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
চিন্তার বিষয় হচ্ছে, সাজসজ্জা ও অন্যান্য কাজের জন্য বাজারে এই শামুকটির প্রচুর চাহিদা ও উচ্চমূল্য রয়েছে। ফলে এদের আহরণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, যার ফলশ্রুতিতে এদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। অবশ্য অস্ট্রেলীয়া, ফুজি, সিসিলিসহ বেশ কয়েকটি দেশে আইন প্রণয়ন করে এদের আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের কাছে এদের বাস্তুতন্ত্র, শারীরতত্ত্ব ও প্রজনন সম্পর্কে খুব কম তথ্য থাকায় গবেষণায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। তবে কিভাবে তাদের প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে। এদের প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারলে একদিকে যেমন এদের বংশগতি সমৃদ্ধ হবে, তেমনি "গ্রেট বেরিয়ার রিফ "-এর ক্ষতির পরিমাণও বহুলাংশে কমে যাবে। তাই "গ্রেট বেরিয়ার রিফ "-এর স্বাস্থ্য রক্ষা ও অন্যান্য ক্ষতির হাত হতে বাঁচাতে প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রক হিসাবে " দৈত্যাকার ট্রাইটন শামুক" নিয়ে আরো বিপুলপরিসরে গবেষণা অতিব প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র ঃ
১. oceana.org/…/cephalopods-crustaceans-other-she…/giant-triton
২. magicseaweed.com/…/starfish-eating-snails-could-help-…/9281/
৩. www.aims.gov.au/…/content/the-triton-that-ate-the-crown-o….
লেখকঃ
মোঃ মেহেদী হাসান সাইম