বয়ান স্ল্যাট ২১ বছরের এক ডাচ তরুণ উদ্যোক্তা যিনি তার প্রতিষ্ঠান ওশান ক্লিন আপের মাধ্যমে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি ওশান ক্লিন আপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিষ্ঠান সমুদ্রকে প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ করছে।
বয়ানের প্রস্তুতকৃত প্রোটোটাইপ একটি ভি (V) আকৃতির দেয়াল যার দৈর্ঘ্য একশ মিটার। প্রস্থে এটি পানির উপরিতল থেকে পাঁচ ফিট উপরে এবং পাঁচ ফিট নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে যা অনেকটা ছাঁকনির মতো। স্রোতের টানে এই ছাঁকনিতে নির্দিস্ট আকারের প্লাস্টিক আটকে যাবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর জমাকৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হবে।
বয়ান স্ল্যাটকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ২০ জন তরুণ উদ্যোক্তার একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সবচেয়ে কনিষ্ঠতম বিজয়ী হিসেবে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ পুরষ্কার পান। নরওয়ের এইচ এম কিং হ্যারাল্ড ২০১৫ সালে বয়ানকে মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রির তরুণ উদ্যোক্তা পুরষ্কার প্রদান করে। ফরেন পলিসি ম্যগাজিনের ২০১৫ সালের বিশ্ব চিন্তকদের তালিকায় বয়ান জায়গা করে নেন। ফোর্বসের আন্ডার থার্টি সংস্করণের ৩০ জনের তালিকায়ও বয়ান স্থান পান।
২০১৫ সালের লন্ডন ডিজাইন মিউজিয়ামের সেরা ডিজাইনগুলোর একটি ছিল বয়ানের ডিজাইন। একই বছর বায়ানের আবিস্কার ইন্ডেক্স এওয়ার্ড, ডিজাইন এওয়ার্ড এবং টাইম ম্যাগাজিনের সেরা ২৫ আবিষ্কারের তালিকায় স্থান পায়।
প্লস্টিকের প্রভাব বর্ণনা করতে গিয়ে বয়ান বলেন, প্লাস্টিক আমাদের খাদ্য চক্রে ঢুকে যাচ্ছে, পর্যটন, মৎস্যশিল্প সবকিছুকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে যার আর্থিক মূল্যমান কয়েক বিলিয়ন ডলার। বয়ানের ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী সমুদ্রের এই প্লাস্টিক পরিষ্কার করতে যে খরচ হবে তা প্লাস্টিককে সমুদ্রে রেখে দিলে যে আর্থিক ক্ষতি হবে তার তুলনায় খুবই নগণ্য।
প্লাস্টিক খুঁজে বের করার পরিবর্তে বয়ান এমন এক প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন যাতে করে সমুদ্রের স্রোতের টানে প্লাস্টিক নিজেই নির্ধারিত জায়গায় জমা হবে। বয়ানের প্রযুক্তি মাত্র ১০ বছরেই গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচ থেকে প্রায় অর্ধেক প্লাস্টিক আবর্জনা সরিয়ে ফেলবে যার পরিমাণ প্রায় ১৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড। প্রচলিত পদ্ধতিতে এই আবর্জনা সরাতে সময় লাগবে প্রায় ৭৯ হাজার বছর। বয়ান বলেন, সাগরে আমরা যে পরিমাণ প্লাস্টিক প্রতিদিন ফেলি, এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশী থাকবে।
ওশান ক্লিন আপ শুরু করার জন্য স্ল্যাট ২০১৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে দেন। ২০১৬ সালের জুনে তার প্রথম প্রোটোটাইপ কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুত হয় এবং উত্তর মহাসাগরে প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। প্রোটোটাইপ পরীক্ষার জন্য উত্তর মহাসগরকে বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ, উত্তর মহাসাগরের স্রোত প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়েও শক্তিশালী। জাপানের সুশিমা দ্বীপের পাশে ২০১৭ সালের শেষে প্রথম পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হবে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ঠিকঠাক থাকলে ২০২০ সালে চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু হবে।
বয়ান ইতোমধ্যেই তার প্রাথমিক ফান্ড হিসেবে প্রয়োজনীয় ১.৫ মিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছেন যার মূল যোগানদাতা নেদারল্যান্ড সরকার এবং বসকালিস নামে নেদারল্যান্ডের একটি অফশোর কোম্পানি ।
গ্রেট প্যাসিফিক প্যাচ এর অর্ধেক প্লাস্টিক সরিয়ে ফেলা নিঃসন্দেহে একটি ভাল খবর। কিন্তু বাকী সমুদ্রের কী হবে। এ প্রসঙ্গে বয়ান বলেন, ভাসমান প্লাস্টিক আবর্জনার অধিকাংশই এখনো আকারে বড়। কিন্তু এগুলো ঢেউয়ের চাপ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং অন্যান্য নানা প্রাকৃতিক কারণে ভেঙে ছোট টুকরা এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হবে। তাই সময় থাকতেই সমুদ্রের প্লাস্টিক গুলো পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি সমুদ্রে প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে হবে। এজন্য কিছু সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। সচেতনতা, কার্যকরী আইন এবং উন্নত প্রযুক্তি এই তিনের মিলিত প্রয়াসে আমরা দুই দশকের মধ্যেই একটি পরিচ্ছন্ন সমুদ্র পেতে পারি।
লেখাটি দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত। লিংকঃ https://goo.gl/2s0WBk
লেখকঃ রাশেদ রাহগীর
সূত্রঃ হাফিংটন পোস্ট