'সুস্থ সমুদ্র মানেই সুস্থ পৃথিবী'। নগরের শত যান্ত্রিক ব্যস্ততার ক্লান্তি দূর করতে, একটু বিনোদন ও স্বস্তির জন্য সকলে ছুটে যায় সমুদ্র সৈকতে। নয়নাভিরাম সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তের দৃশ্যে আমরা পুলকিত হই। কিন্তু এই সমুদ্র সৈকত–বেলাভূমি আজ প্লাস্টিক, পলিথিন ও আবর্জনায় ভরে আছে। এই দূষণ থেকে বাঁচার জন্য দরকার জনসচেতনতা ও সরকারি নিবিড় তদারকি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের উপকূল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অনুষ্টিত হয় “আন্তর্জাতিক ক্লিন আপ বীচ কার্নিভাল’১৭। বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক সম্পদ ও শক্তির যথাযথ আহরণ ও টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে সামুদ্রিক অর্থনীতি নির্ভর ও পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নে এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব মেরিন সায়েন্স আন্ড টেকনোলজি, তাইওয়ান এবং এশিয়া মেরিন এডুকেটরস এ্যাসোসিয়েশন”এর উদ্যোগে এশিয়ার মোট ৬টি দেশের ১৩ টি সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল ১৪ অক্টবর এ কর্মসূচি একযোগে সম্পন্ন হয়। এতে স্থানীয় আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশে "ব্লু গ্রিন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ" এবং "বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী" যৌথভাবে প্রায় ১৫০ জন সমুদ্রপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সকল আয়োজক দেশ ১৩ : ৩০(জিএমটি+৮) (বাংলদেশ সময় সকাল ১১:৩০) টায় কেন্দ্রীয়ভাবে স্কাইপ ভিডিও’র মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে একযোগে উদ্বোধন করে। এছাড়া টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে ৩০ জন ট্যুরিস্ট পুলিশসদস্য সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অংশগ্রহণ করেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী এর কমান্ড্যান্ট ড.সাজিদ হোসেন ও ডেপুটি কমান্ড্যান্ট ক্যাপটেন কাজী এবিএম শামীম, ব্লু গ্রিন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন মুন্না যিনি এশিয়া মেরিন এডুকেটরস এ্যাসোসিয়েশন” এর প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড মেম্বার, স্পারসোর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ওবাইদুল কাদের, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোঃ মকবুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম, পতেঙ্গা সৈকত দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম প্রমুখ ।
সমুদ্র, সমুদ্র দূষণ, সমুদ্র সাক্ষরতা, সমুদ্র ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটনে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাই ছিল এই কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য। সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে পর্যটকদের আগ্রহ বাড়বে। প্রাণ–প্রতিবেশরক্ষা এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সমুদ্র এবং সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
ডঃ মোসলেম উদ্দিন পতেঙ্গা সৈকতের ব্যবসায়ী এবং আগত পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা পরিচালনা এবং সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হলে দেশের সৈকতভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে। বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদেরকে একটা স্বাধীন সমুদ্র উপহার দিয়েছেন যার আয়তন প্রায় বাংলাদেশের ভূমি সীমার সমান। এর যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের কর্তব্য। তিনি স্কুল ভিত্তিক সমুদ্র শিক্ষার প্রসারে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ওবাইদুল কাদের সমুদ্র শিক্ষার প্রসার এবং সমুদ্র সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তরুণদের প্রয়াসের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ডঃ সাজিদ হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগর অফুরন্ত সম্ভাবনার আধার। সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই আহরণ ও ব্যবহার দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। মেরিন একাডেমীর ডেপুটি কমান্ড্যান্ট কাজী এবিএম শামীম বলেন, বাংলাদেশের ১২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সমুদ্রবিজ্ঞান পড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শু করেছে। বাংলাদেশের সর্বচ্চরে সমুদ্র শিক্ষা এবং সমুদ্র বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্লু গ্রিন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং মেরিন একাডেমি ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মকবুল ইসলাম বলেন, সমুদ্র বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশের অর্থনীতি বাঁচবে। সমুদ্রকে ঘিরেই আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য বিকাশ লাভ করেছে। তাই এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আমাদের একান্ত কর্তব্য। ভবিষ্যতে তাদের এ প্রচেষ্টা আর জোরদার হবে। পতেঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম সৈকত নোংরা করে রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে, ভবিষ্যতে ব্যবসায়ী কমিউনিটি নিজ উদ্যোগে সচেতন থেকে নিজেদের আওতাভুক্ত এলাকা পরিষ্কার রাখবেন বলে অঙ্গীকার করেন। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর মেরিন একাডেমী এবং গ্রিন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা ছয়টি দলে বিভক্ত হয়ে পতেঙ্গা সৈকত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেয়। সংগৃহীত প্লাস্টিক, পলিথিন এবং অন্যান্য আবর্জনা বস্তায় ভরে নির্ধারিত স্থানে ফেলা হয়।