Categories

BLUE ECONOMY
CLIMATE
MYSTERIOUS OCEAN
OCEAN BASIC
OCEAN TECH
RESEARCH
UNCATEGORIZED
UNDERWATER LIFE

তেপায়া মাছ (The Tripod Fish)

অসীম রহস্যের আধার আমাদের সমুদ্র। আর সমুদ্রে বসবাসকারী সহস্র প্রজাতির প্রাণি এই রহস্যময়তাকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে। আর সেই প্রাণিগুলো যদি হয় অন্ধকারময় গভীর সমুদ্রের, তাহলে তো কথাই নেই। আর সে রকমই একটি প্রাণি হচ্ছে "তেপায়া মাছ" বা Tripod Fish.

পা-ওয়ালা মাছ!!! তাও আবার তিন তিনটে!!!! শুনে খুব অবাক লাগছে, তাইনা?অবাক হওয়ারই কথা।

screenshot_4

কিন্তু সমগ্র পৃথিবীজুড়ে আটলান্টিক,প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরে ৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ হতে ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে নাতিশীতোষ্ণ ও ক্রান্তীয় জলভাগে এদের প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।

এরা সাধারণত Midnight এবং Abyssal zone এ বসবাস করে। একারণে প্রায় ৯০০-৪৭০০ মিটার (২৯৫০-১৫৪০০ ফুট) গভীরতা পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়। গভীর সমুদ্রের প্রাণিগুলো দেখতে সাধারণত বীভৎস ও বিদঘুটে ধরনের। তবে খানিকটা তামাটে বর্ণের এই প্রাণিটি তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, অত্যন্ত সুন্দর ও সত্যিই অসাধারণ। প্রায় ১২-১৪ ইঞ্চি লম্বা মাছটির মাথা,পেট ও দেহের পশ্চাৎভাগে ফিকে ধূসর রং

screenshot_5

 

তুলনামূলক ছোট এই মাছটির শ্রোণী ও পুচ্ছ পাখনার প্রান্তভাগ সম্প্রসারিত হয়ে সূক্ষ্ম শলাকার মতো উপাঙ্গে রূপান্তরিত হয় ( প্রায় ৩.৩ ফুট লম্বা,যা সমগ্র দেহের প্রায় তিনগুণ), যার উপর ভর দিয়ে এরা জীবনের অধিকাংশ সময়ই খাদ্য শিকারের জন্য সমুদ্রতলে ভূস্তরের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। দেখে মনে হতে পারে যে কোনো দক্ষ ফটোগ্রাফার হয়ত তিন পা-ওয়ালা ক্যামেরা স্ট্যান্ড নিয়ে ছবি তোলার জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করছে। আর এজন্যই এদের সাধারণ নাম "তেপায়া মাছ বা Tripod fish". অবশ্য এজন্য এদের "Stilt Walker" -ও বলা হয়ে থাকে।

এরা মাংসাশী প্রাণি। ছোট আকারের ক্রাস্টেশিয়ানস, জুপ্লাংকটন, ক্ষুদ্র প্রাণি ইত্যাদি এদের প্রধান খাদ্য। এদের চোখ অত্যন্ত ছোট, বলতে গেলে পুরোপুরিভাবেই অকার্যকর। কেননা সমুদ্রের এত গভীরে কোনো প্রকার আলো পৌঁছোতে পারেনা। তাই এই গভীর অন্ধকারে চোখ থাকা না থাকারই নামান্তর। তাহলে সবার মনে প্রশ্ন হতে পারে যে, চোখে না দেখলে এরা শিকার করে কিভাবে, তাইনা?

প্রকৃতপক্ষে এদের বক্ষপাখনা দুটি এন্টেনার মতো উর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে যা অত্যন্ত সংবেদনশীল। পানিতে সামান্য কিছুর নাড়াচাড়াও এরা শনাক্ত করতে পারে। যেহেতু একেবারে সমুদ্রের তলদেশে ভূ-সংলগ্ন স্তরে কোনো স্রোত নেই বললেই চলে, তাই এরা এদের লম্বা পা দিয়ে ভূস্তর হতে প্রায় ৩ ফুট উপরে স্রোতের বিপরীতমুখী হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। স্রোতের সাথে কোনো শিকার ভেসে আসলে বক্ষপাখনা তা শনাক্ত করে এবং সেটিকে সাথে সাথে শিকারে পরিণত করে।

একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এদের রূপান্তরিত পাগুলো অত্যন্ত কঠোর ও দৃঢ় থাকে। কিন্তু এরা যখন সাঁতার কাঁটে তখন তা অত্যন্ত কোমল ও নমনীয় হয়ে যায়। ব্যাপারটি অত্যন্ত অদ্ভুত, এমনকি বিজ্ঞানীদের কাছেও এর সঠিক ব্যাখ্যা নেই। তবে ধারণা করা হয় যে, এরা সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পানি পাম্প করার মাধ্যমে এমনটি করে থাকে।

এরা নির্জনবাসী বেনথিক ( যারা সমুদ্রের তলদেশে বসবাস করে) প্রজাতির প্রাণি। সেই সাথে এরা উভলিঙ্গিক। শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের দেহে প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুং- প্রজননতন্ত্র পূর্ণতা পেতে থাকে। সমুদ্রতলে বিরূপ পরিবেশের জন্য সঙ্গী না পেলে এরা নিজেরাই একই সাথে ডিম ও শুক্রাণু নিঃসরণ করে বংশগতির ধারা অব্যাহত রাখে। কিন্তু যখন সঙ্গী খোঁজে পায় তখন পরস্পরের সহযোগিতায় উর্বর সন্তানের জন্ম দেয়।

এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Bathypterios grallator. এই নামকরণটিও অত্যন্ত সুন্দর ও যুক্তিযুক্ত, যেটি গ্রীক ও ল্যাটিন শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। গ্রীক 'Bathy' অর্থ Deep বা গভীর আর 'pterios' অর্থ Feathery বা পালকসদৃশ। অপরদিকে, ল্যাটিন 'Grallator' অর্থ one who walks on stilts বা যে লম্বা পায়ের সাহায্যে হাঁটে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, Bathypterios grallator অর্থ হচ্ছে 'গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী পালকসদৃশ পাখনা ও লম্বা পা-ওয়ালা প্রাণি'।

এদের জীবনকাল সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় নি। তবে ধারণা করা হয় যে এরা ১-২ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

লেখকঃ মেহেদি হাসান সাইম
ওশেনোগ্রাফি, ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র:
১. www.aquariumofpacific.org/onlinelearningcenter/…/tripod-fish
২. www.softschools.com/facts/animals/tripod-fish-facts/970/

Comments

comments