Categories

BLUE ECONOMY
CLIMATE
MYSTERIOUS OCEAN
OCEAN BASIC
OCEAN TECH
RESEARCH
UNCATEGORIZED
UNDERWATER LIFE

সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে প্লাস্টিক বর্জ্য

প্লাস্টিক বোতল বা পলিথিন ব্যাগ অবহেলায় নিক্ষেপের সময় আমাদের মনে কি প্রশ্ন জাগে আমরা পরিবেশ দূষণের অপরাধ করছি? প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে পচতে অথবা কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে ৷ তাই একে "অপচ্য পদার্থ" হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।ব্যক্তিগত বিবেচনায় মনে হতে পারে একটি বোতল ফেলে কী আর অপরাধ করলাম! কিন্তু চিন্তা করুন, পৃথিবীর প্রায় সাত বিলিয়ন মানুষ যদি এরকমভাবে চিন্তা করে তাহলে এর পরিণতি কী দাঁড়াতে পারে? আমরা যা কিছুই নিক্ষেপ করি না কেন, এ সমস্ত প্লাস্টিক সামগ্রীর শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে সমুদ্র।পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশই হচ্ছে সমুদ্র যার বড় একটা অংশে মানুষ এখনও পৌঁছাতে পারেনি । তারপরেও মানুষের কর্মকান্ডের কারণে দূষণের কবল থেকে রেহাই পায়নি। সমুদ্র দূষণের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশেরই উৎপত্তি মাটিতে। আর এই দূষণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে প্লাস্টিক। এর কারণ হলো পুরোপুরি নষ্ট হতে প্লাস্টিক কয়েকশ বছরও সময় নিতে পারে।

plastic-on-the-sea-bed

ছবি উৎসঃ clairelewisco.wordpress.com
প্লাস্টিক আবর্জনার কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হচ্ছে। জীবনযাত্রা আধুনিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ৷ প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহারের পর তার বিশাল একটা অংশ চলে যাচ্ছে সমুদ্রে, যা বিপন্ন করছে সেখানকার জীববৈচিত্র্যকে।প্লাস্টিকের বোতল, খেলনা, যন্ত্র, খাবার ও পণ্যের মোড়ক, আরও কত কি....সমুদ্রে দিন দিন বাড়ছে এইসব বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ৷ দিন যত যাচ্ছে ততই যেন সমুদ্রের পানি দূষিত থেকে আরও দূষিত হচ্ছে৷ গবেষকদের হিসেব অনুযায়ী, সমুদ্রের প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকাতে ১০০ গ্রাম করে এই ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য ভাসছে৷ সেই মতে, গোটা বিশ্বের সমুদ্র এলাকাতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ এখন মোট ৪০ হাজার টনের উপর৷ অনেক সামুদ্রিক প্রাণী এগুলোকে খাবার মনে করে খেতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছে। অনেক সামুদ্রিক প্রাণিদের থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য প্লাস্টিক দূষণ পরোক্ষভাবে দায়ী৷ সামুদ্রিক প্রাণিদের প্রজনন ক্ষমতার উপরেও এর প্রভাব লক্ষনীয়। প্লাস্টিক দূষণ প্রাণিকূলের খাদ্যচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে ৷ এটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণির উপর বেশি বিরুপ ফেলে ৷ প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক প্রাণির জন্য "একক সর্বাধিক হুমকি" হিসাবে বিবেচিত ৷ বেশকিছু সামুদ্রিক প্রজাতি, যেমন: সামুদ্রিক কচ্ছপের পাকস্থলীতে বিজ্ঞানিরা প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য পেয়েছেন ৷সামুদ্রিক কচ্ছপ সাধারণত জেলিফিস, সামুদ্রিক কীট খেয়ে জীবনধারণ করে ৷ জেলিফিসের আকার ও আকৃতি প্লাস্টিক ব্যাগের মত হওয়ায় কচ্ছপ ভুল করে প্লাস্টিক ব্যাগ ভক্ষণ করে ৷ এতে তাদের খাদ্য নালিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং খাদ্য গ্রহন করতে অক্ষম হওয়ায় ধীরে ধীরে মারা যায়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত।মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এর রূপ পরিবর্তন করে।আর এই রূপ দেখতে হাজার হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন,উপভোগ করেন সাগর তীরের সৌন্দর্য। তাদের সাথে নিয়া আসা বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী নিজেদের অসচেতনতার কারণে ফেলে দিচ্ছেন উপকূলে। এগুলো বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে মিশে যাচ্ছে সমুদ্রে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবর্জনা ফেলার জন্য জায়গা ঠিক করে দেওয়া হলেও পর্যটকরা এখনো সচেতন নয়। এখনো সৈকতে যেখানে সেখানে পাওয়া যায় প্লাস্টিক জাতীয় ময়লা-আবর্জনা। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় আবর্জনা সংগ্রহ করে যেখানে রাখা হয়, সেখান থেকে পুনরায় বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে ফিরে আসে সমুদ্রে। ।সমুদ্র ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ এবং সামুদ্রিক প্রানী রক্ষায় আমাদেরকে প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।কেননা সুস্থ সমুদ্র, সুস্থ পৃথিবী।
তথ্যসুত্রঃ ১। http://www.shodalap.org/sorowar/15684/
২। http://www.dailysangram.com/print.php?news_id=56804
৩। https://bn.wikipedia.org/wiki
লেখকঃআরিফুজ্জামান সজীব
মেরিন সাইন্স, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

comments